এক.
ফায়েলের চারপাশে অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্খীর ভীড় সব সময় বেড়েই চলছে। তারপরও প্রেয়সীর স্থানটা অপূর্ণ রয়ে গেছে। কেন যে এ স্থানটা পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে কারো আগমন হলো না সেটার উত্তর খোঁজা হয়েছে অসংখ্যবার। একটা সময় এ নিয়ে বড্ড আফসোস হতো। কিন্তু এখন সেটা মেনে নেওয়ার মতো হয়ে গেছে। তবুও মাঝে মধ্যে কেমন যেন না পাওয়ার বেদনায় বুকের বাঁ পাশটায় একটু চিন করে উঠে।
দুই
একদিন ফায়েলের ফেসবুকে অপরিচিত একটি আইডি ডানা ছাড়া পরী থেকে বন্ধুত্বের আহবান আসে। কিন্তু কোন প্রোফাইল পিকচার নেই তাতে। তবে স্ট্যাটাসগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগে ফায়েলের। বেশির ভাগ স্ট্যাটাসই ছিল কবিতার। যা পড়ে মুগ্ধ হয় ফায়েল । নিজে কবি কিনা তাই বিশেষ কিছু বিবেচনা না করেই সম্মতি দেয় বন্ধুত্বের আহবানের।
এরপর শুরু হয় মেয়েটির পক্ষ থেকে বার্তা বিনিময়। মেয়েটি নিজেকে তার একজন শুভাকাঙ্খী বলে জানায়। কবিতার একটি গ্রুপ পেজে ফায়েলের মেয়েদের নিয়ে লেখা একটি অণুকাব্য পড়ে ভীষণ ভালো লাগে তার।
এরপর একদিন মেয়েটি ফায়েলের মুঠোফোন নম্বর নিয়ে কল করে ফায়েলকে। মেয়েটির কন্ঠস্বর শুনে বিমোহিত হয় ফায়েল। ধীরে ধীরে একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ে মেয়েটির উপর। একদিন ছবি দিতে জানানো হয় মেয়েটিকে। মেয়েটি দিতে আপত্তি করে। কিন্তু ফায়েলের তীব্র অনুরোধে মেয়েটি একটি ছবি পাঠায়। কিন্তু তাতে ভালোভাবে মেয়েটির অবয়ব বুঝা যায় না । ছবির সাথে এটাও জানিয়ে দেয় যে যদি বেশি বাড়াবাড়ি হয় তবে সে ব্লক ও সিম পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। এভাবে মাস ছয়েক চলার পর নিজেকে আর সামলাতে পারে না ফায়েল। অনেক কষ্টে মেয়েটির সাথে দেখা করার জন্য সুযোগ পায়।
তিন
মেয়েটির জানানো স্থানে এসে দেখা হয় না ফায়েলের। ফোনও বন্ধ পায় । এরপর চরম অভিমান নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ঘন্টাখানেক পর মেয়েটি ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করে এবং বন্ধুত্ব ছিন্ন করে। ফায়েল জানিয়ে দেয় সে যদি তার আসল ছবি না দেয় তবে সে সুইসাইড করবে।
অতপর মেয়েটি কিছুক্ষন পর আপলোড করে দিচ্ছে বলে লাইন কেটে দেয়। দীর্ঘক্ষণ ফেসবুকের উপর চোখ রেখে অপেক্ষায় থাকে ফায়েল। এই বুঝি মেয়েটা তার বাস্তব ছবি আপলোড করছে।
কিন্তু কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে যাবার পরও যখন ছবি দেখতে পায় না তখন প্রচন্ড অভিমানে থমকে যায় ফায়েল। দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়তে থাকে। একরাশ কষ্টের নীল রং ছেয়ে যায় সমস্ত শরীর।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে যায় ফায়েলের হৃদযন্ত্র।
চার
ফায়েলের মৃত্যুর পর চারদিকে কান্নার রোল। বিধবা মা তার একমাত্র অবলম্বন সন্তানকে হারিয়ে স্তব্ধ। ছেলেকে বুকে নিয়ে নিশ্চুপ মা। একটু পর ফেসবুকে একটা মেয়ের হাস্যজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠে। যার উপরে লেখা Sorry.
সকলের আর বুঝতে বাকি রইল না যে এই সেই মেয়ে যাকে ঘিরে হাজারো স্বপনের ফানুস উড়াত ফায়েল।
মায়ের দুচোখ বেয়ে জলের ফোঁটা বেয়ে পরে ল্যাপটপের এন্টার বাটনের উপর।
খানিক বাদে মেয়েটার ছবির স্থানে চলে আসে অন্য একটি পোস্ট।
যাতে লেখা আজ বিশ্ব ভালোবাসার দিবস,
Happy Valentine Day